অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি | Anti-Circular Society

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর সুবাদে সারা বাংলা জুড়ে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বাংলার ছাত্র সমাজের মধ্যে এক অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটে। বিদেশি শিক্ষা বয়কট ও স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে বাংলার ছাত্র সমাজ তাদের স্কুল কলেজের পরীক্ষা বয়কট করে স্বদেশী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে বাংলার তৎকালীন মুখ্য সচিব টমাস কার্লাইল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর কার্লাইল সার্কুলার নামে একটি আদেশনামা জারি করেন। এই আদেশনামা দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বদেশী সভা সমিতিতে যোগদান, বন্দেমাতরম ধ্বনি দেওয়া ও বিদেশী পন্যাগারের সামনে পিকেটিং করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং বলা হয় এই আদেশনামা অমান্য করলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ও কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে, বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে, স্কুল-কলেজের অনুমোদন বাতিল করা হবে এবং শিক্ষকদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে।

প্রতিষ্ঠা

কার্লাইল সার্কলারের বিরুদ্ধে কলকাতার সিটি কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্রনেতা শচীন্দ্র প্রসাদ বসু ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ৪ঠা নভেম্বর অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশিষ্ট ব্রাহ্ম নেতা ও সিটি কলেজের অধ্যাপক কৃষ্ণ কুমার মিত্র এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং স্বয়ং শচীন্দ্র প্রসাদ বসু এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক পদে আসীন হন।

দেখে নাও : ভারতের বিপ্লবী সমিতি ও প্রতিষ্ঠাতা

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠান প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-

  • 1)স্বদেশী আন্দোলনে যোগদানের অপরাধে স্কুল-কলেজ থেকে বহিঃস্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
  • 2)বক্তৃতা, সংগীত ও সভা যাত্রার মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনের আদর্শ প্রচার করা।
  • 3)বিদেশি পন্যাগারের সামনে পিকেটিং করা।
  • 4)শহরে ও গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বদেশী পণ্য সরবরাহ করা।
  • 5)স্কুল-কলেজের ছাত্র সমাজকে স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষিত করা।
দেখে নাও : ঐতিহাসিক সমাজ / সমিতি ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির কার্যাবলী

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির উদ্যোগে ব্রিটিশ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার হয়। ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ওই সমস্ত জাতীয় বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে। শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রদের সঙ্ঘবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যান। এই সোসাইটির কার্যাবলীতে ভীত ও ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ সরকার শচীন্দ্র প্রসাদ বসুকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রেপ্তার করে রাওয়ালপিন্ডি জেলে বন্দী করে রাখে। ফলে এই সোসাইটির কার্যাবলী সীমিত হয়ে পড়ে।

Scroll to Top