বাংলাদেশের উপজাতি সমূহ – Tribes of Bangladesh
সারা বাংলাদেশে প্রায় ৫০টি উপজাতি রয়েছে। আজকে আমরা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উপজাতি নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাদেশের উপজাতি সমূহ – Tribes of Bangladesh ।
বাংলাদেশের প্রধান উপজাতি
বাংলাদেশের প্রধান উপজাতিসমূহ তালিকা নিচে দেওয়া রইলো।
চাকমা
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বাস করে – চাকমা উপজাতি। চাকমা জনগোষ্ঠী নিজেদের “চাঙমা” নামে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করে। প্রচলিত মতামত অনুযায়ী, চাকমারা চম্পক নগরের অধিবাসী ছিল।
- চাকমারা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটি, খাগড়াগাছি ও বান্দরবন জেলায় বসবাস করে।
- ধর্ম বৌদ্ধ ।
- শিক্ষার হার সব থেকে বেশি।
- বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বলা হয় বিজু।
- ফাল্গুনী পূর্ণিমা এদের ধর্মীয় উৎসব।
- চাকমা বিদ্রোহের নায়ক জুম্মা খান।
- এদের গ্রামকে বলা হয় আদম।
- চাকমা ভাষায় লিখিত প্রথম উপন্যাস ফাবো (২০০৪)।
- প্রধান ধর্মীয়গ্রন্থ ত্রিপিটক।
- চাকমাদের মধ্যে মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
- চাকমা পরিবার পিতৃতান্ত্রিক ও পিতৃসূত্রীয়।
- জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকমারা পাহাড়ের গায়ে জুমচাষ করে।
- চাকমাদের প্রধান খাদ্য ভাত।
মারমা
মারমারা “মগ” নামেও পরিচিত। সংখ্যার দিক থেকে মারমারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।
- মূলত রাঙামাটি, খাগড়াগাছি ও বান্দরবান এলাকায় বসবাস করে।
- মারমা বর্ষবরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই।
- এরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত।
- এদের পরিবার পিতৃতান্ত্রিক।
- এরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী।
- এই সম্প্রদায়ের প্রধান পাশে কৃষি। সাধারণত জুম চাষ করে।
- “তোহজা” এদের একটি জনপ্রিয় খাবার।
ত্রিপুরা
- ত্রিপুরা বর্ষবরণ উৎসবের নাম – বৈসুক।
- ত্রিপুরা আদিবাসী গোষ্ঠী সনাতন ধর্মবিশ্বাসের।
- ত্রিপুরারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত।
- “টিপরা” নামেও এদের পরিচিতি রয়েছে।
- এদের আদি বাসস্থান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।
- এরা অনার্য।
- পিতৃতান্ত্রিক পরিবার।
- চট্টগ্রাম অঞ্চলের ত্রিপুরাদের অর্থনীতি জুমচাষ, পশু পালন ও হালচাষের ওপর নির্ভরশীল।
গারো
- এরা মান্দি নামে পরিচিত। গারো ভাষায় মান্দি শব্দটির অর্থ মানুষ।
- গারো পাহাড়ের নামানুসারে “গারো” নামকরণ করা হয়।
- বাংলাদেশে প্রধানত লামদানি গারোরা বসবাস করে।
- গারোরা ভারতের আসাম প্রদেশের আদি বাসিন্দা ।
- গারো পরিবার মাতৃতান্ত্রিক।
সাঁওতাল
- সাঁওতালরা অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠীভুক্ত।
- বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বাস করার পর ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৬ সালে সাঁওতালদের স্থায়ী এলাকা নির্ধারণ করে দেয়।
- “দামনি কো” নামের এই এলাকাটি পরবর্তীতে সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিতি লাভ করে।
- সাঁওতাল ভাষায় “দামনি” শব্দের অর্থ অঞ্চল এবং “কো” শব্দের অর্থ পাহাড়।
- সাঁওতালরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম অধিবাসী।
- এই সম্প্রদায়ের মানুষ প্রধানত হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী।
- সাঁওতালদের মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত।
মনিপুরী
- বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নৃগোষ্ঠী হল মনিপুরী।
- সাধারণত ভারতের মনিপুর অঞ্চলের অধিবাসীদের মনিপুরী বলা হয়। ১৭৫৬, ১৭৫৮ এবং ১৮৯১ সালে এরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা বসবাস শুরু করা।
- মণিপুরীরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
- পাহাড়ি অঞ্চলে জুমচাষ ও সমতল অঞ্চলে হালচাষের মাধ্যমে এরা জীবিকা নির্বাহ করে।
রাখাইন
- রাখাইন বড় ধর্মীয় উৎসব – বুদ্ধপূর্ণিমা।
- বর্ষবরণ উৎসবের নাম সান্দ্রে।
- বসবাস পটুয়াখালী জেলায়।
- মগের বংশধর, যারা সমতলে থাকে।
- আদি নিবাস আরাকান।
- উৎসবের নাম মুৎসলোং।
মুরং
- মুরংদের দেবতার নাম ওরেং
- মুরং উপজাতির বর্ষবরণ উৎসবের নাম ছিয়াছত
- পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাচীন অধিবাসী মুরং বা ম্রো
বাংলাদেশের কোন উপজাতি কোথায় বাস করে
কোন উপজাতি কোথায় বাস করে তার তালিকা নিচে দেওয়া রইলো।
নং | উপজাতি | বসবাস স্থল |
---|---|---|
১ | গারো | ময়মনসিংহ |
২ | চাকমা | রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি |
৩ | সাঁওতাল | রাজশাহী ও দিনাজপুর |
৪ | রাখাইন | পটুয়াখালী |
৫ | মারমা | কক্সবাজার, বান্দরবান ও পটুয়াখালী |
৬ | হাজং | ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা |
৭ | রাজবংশী | রংপুর |
৮ | মুরং | বান্দরবানের গভীর অরণ্যে |
৯ | কুকি | সাজেক ভেলী (রাঙ্গামাটি) |
১০ | হুদি | নেত্রকোনা |
১১ | পাংখো | বান্দরবান |
১২ | খাসিয়া | সিলেট |
১৩ | ওরাও | বগুড়া, রংপুর |
১৪ | টিপরা | খাগড়াছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রাম |
১৫ | লুসাই | পার্বত্য চট্টগ্রাম |
১৬ | খুমি | বান্দরবান |
১৭ | মনিপুরী | সিলেট |
১৮ | তনচংগা | রাঙ্গামাটি |
১৯ | রনজোগী | বান্দরবানের গভীর অরণ্যে |
এরকম আরও কিছু পোস্ট :
বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণাগার তালিকা – Research Centres of Bangladesh