Women’s Reservation Bill 2023 : ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী মহিলা সংরক্ষ বিল, যেটি ২০শে সেপ্টেম্বর লোকসভায় পাশ হয়। এটি হল সংবিধানের ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল। লোকসভায় ৪৫৪ জন সাংসদ মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে ভোট দেন এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন বা AIMIM-এর দুইজন সাংসদ – আসাদউদ্দীন ওয়েসি ও ইমতিয়াজ জালিল এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল |
অন্যদিকে, রাজ্যসভায় ২১ সেপ্টেম্বর উপস্থিত ২১৪ জন সদস্যের সবাই এই বিলের পক্ষে ভোট প্রদান করে তা পাশ করেন। এখন এই বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে। এরপর এটি সমস্ত রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা হবে। যার মধ্যে অর্ধেক রাজ্য বিল পাশ করলেই তা গোটা দেশে কার্যকর হবে।
Table of Contents
মহিলা সংরক্ষণ বিলের ইতিহাস
১৯৯৩ সালে পাশ হওয়া ৭৩ ও ৭৪তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও পৌরসভা, কর্পোরেশনে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ থাকলেও তা লোকসভা, রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। যদিও, সংবিধানে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় লোকসংখ্যার অনুপাতে আসন সংরক্ষণের উল্লেখ আছে।
লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভার মহিলা আসন সংরক্ষিত করা যায়নি কারণ গণপরিষদের সদস্যরা মহিলা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছিলেন।
বর্তমান লোকসভা অর্থাৎ ১৭তম লোকসভায় সদস্যদের মাত্র ১৫ শতাংশ মহিলা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে সদস্যদের মাত্র ৯ শতাংশ মহিলা ।
২০১৫ সালে প্রকাশিত ভারতে মহিলাদের অবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে রাজ্য বিধানসভাগুলি ও লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের হার খুবই হতাশাজনক। এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় স্থানীয় সংস্থা, রাজ্য বিধানসভা, লোকসভা, মন্ত্রীস্তর এবং সরকারের সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থায় মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার।
২০০১ সালে ন্যাশনাল পলিসি ফর দ্য এমপাওয়ারমেন্ট অফ ওমেন্সে সুপারিশ করা হয়েছিল উচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের।
Also Check : ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ
১৯৯৬ সালে প্রথমবার ৮১তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা হয়েছিল। লোকসভার সদস্যরা বিলটি বাতিল করে তা তৎকালীন জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে প্রেরণ করেন যার সভাপতি ছিলেন গীতা মুখার্জি। কমিটির প্রতিবেদন ওই বছরের ডিসেম্বরে লোকসভায় পেশ করা হয় কিন্তু লোকসভা ভেঙে যাওয়ার কারণে বিলটি বিলুপ্ত হয়।
১৯৯৮ সালে দ্বাদশ লোকসভায় বিলটি পুনরায় পেশ করা হয় কিন্তু পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার কারণে বিলটি বিলুপ্ত হয়। এরপর ১৯৯৯, ২০০২ এবং ২০০৩ সালে বিলটি পুনরায় পেশ
করা হলেও তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পায়নি, যদিও বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন ছিল বিলের পক্ষে।
২০০৮ সালে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হয়। বিলটির সমর্থনে ১৮৬টি ভোট পড়ে এবং বিপক্ষে একটি। বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয় এবং লোকসভায় পেশ করা হয় আলোচনার জন্য। কিন্তু ১৫তন লোকসভা ভেঙে যাওয়ায় বিলটি পুনরায় বিলুপ্ত হয় ।
Also Check : সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধনী তালিকা
অবশেষে ২০২৩ সালে বিলটি সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে গেল। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে। এরপর বিলটি রাজ্য বিধানসভাগুলিতে পেশ করা হবে, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাজ্য বিধানসভায় বিলটি পাশ করলেই তা গোটা দেশে কার্যকর হবে।
বিলটির বৈশিষ্ট্য
মহিলাদের আসন সংরক্ষরণ : এই বিল রাজ্য বিধানসভাগুলি ও লোকসভায় মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করবে। দিল্লি বিধানসভার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির যে আসন তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত সেখানেও এই আইন প্রযোজ্য হবে।
সংরক্ষণের সূচনা : এই বিল প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচালিত আদমশুমারি বা সেনসাসের পরে এই সংরক্ষণ কার্যকর হবে। আদমশুমারির ভিত্তিতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ডিলিমিটেশন বা সীমানা নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের জন্য এই সংরক্ষণ কার্যকর হবে, যদিও সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারবে।
আসনের চক্রাকার পরিবর্তন : সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত প্রতিটি সীমানা বা ডিলিমিটেশন নির্ধারনের পর মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলি চক্রাকারে পরিবর্তিত হবে।
বিলটি আইনে পরিণত হলে সংবিধানে যে ধারাগুলি নতুন যুক্ত হবে
ধারা ৩৩০A এবং ৩৩২A : লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় মহিলা আসন সংরক্ষণের উল্লেখ থাকবে।
ধারা ৩৩৪A : ১৫ বছরের সময়সীমার উল্লেখ থাকবে। পাশাপাশি ২৩৯AA ধারার সংশোধন করতে হবে যেখানে দিল্লি বিধানসভার বিশেষ সুবিধাগুলির উল্লেখ রয়েছে।